Ajker Patrika

থাপ্পড় মারতেই সপরিবারে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েছিলেন শ্রমিক লীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২: ১৯
থাপ্পড় মারতেই সপরিবারে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েছিলেন শ্রমিক লীগ নেতা

২৬ সেপ্টেম্বর সকালে নগরের নিউমুরিংয়ের পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ কার্যালয়ের অফিসে প্রবেশ করছিলেন বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শান্তনু দাশ। তাকে ঢুকতে দেখেই এগিয়ে এসে প্রকৌশলীর সামনে দাঁড়িয়ে গতিরোধ করেন মধ্যবয়স্ক এক দীর্ঘদেহী ব্যক্তি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হঠাৎ করেই প্রকৌশলীকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক দফা চড়-থাপ্পড় দেন তিনি।

প্রকৌশলীকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক দফা চড় থাপ্পড়ের এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে নগরের নিউমুরিংয়ের পিডিবি কার্যালয় প্রাঙ্গণের সিসি টিভি ফুটেজে। 

বিদ্যুৎ অফিসে এসে এভাবে প্রকৌশলীকে মারধর করা ওই ব্যক্তির নাম সেলিম নাজমি (৫০)। তিনি বন্দর ডক শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডক শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও গোসাইলডাঙ্গার সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম।

নগরের দক্ষিণ হালিশহরের এলাকায় তাঁর সেমি পাকা ভাড়া বাসায় মিটার টেম্পারিংয়ের দায়ে পিডিবির পক্ষ থেকে জরিমানার পর অফিসে গিয়ে তিনি এমন কাণ্ড ঘটান।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের শিকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শান্তনু দাশ বলেন, ‘আমরা তিনটি মিটারে টেম্পারিং করার প্রমাণ পাই। সেগুলো খুলে নিয়ে আমরা তিন মাসে ৫ হাজার ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ চুরির দায়ে কথিত শ্রমিক নেতা সেলিম নাজমিকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করি। হাতেনাতে তাকে টেম্পারিং হয়েছে প্রমাণ দিলে তিনি আমাদের জরিমানা পরিশোধ করবেন বলেও জানান। অথচ তিন দিন পর এসে উল্টো আমাকে সবার সামনে চড়-থাপ্পড় দিয়ে মারমুখী আচরণ করেন।’ 

শান্তনু দাস আরও বলেন, ‘তিনি তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকেও নিয়ে এসেছিলেন। চড়-থাপ্পড় মারার পরে তাঁর স্ত্রী আমার সঙ্গে কথা বলতে এলে আমি তাকে চুপ থাকার কথা বলি। এটি শুনে পাশে থাকা তাদের ছেলেও (২৫) আমাকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া শুরু করে।’ 

নিউমুরিং বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামির আসাব বলেন, আমরা ওই ব্যক্তির ভাড়া বাসায় মিটার টেম্পারিংয়ের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছি এবং তাকে জরিমানাও করা হয়েছে।

তবে অফিসে এসে কর্মকর্তাকে এভাবে মারধর করলেও এখনো কেনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। শিগগিরই আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব। 

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মারধর করার বিষয়টি শুনেছি। কোন সরকারি অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাকে এভাবে মারধরের ঘটনা অপরাধ। তবে এখনো এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেলিম নাজমি বলেন, আমি দুই বছর ধরে আমার ভাড়া বাসায় যাইনি। সেখানে মিটারে কেমনে কি হলো তা আমি জানি না। তবে আমরা তো চোর নই। অথচ তাঁরা আমাদের বিদ্যুৎ চুরি করেছি বলে অভিযোগ করছেন। 

মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ওই প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তিনি তখন আমার স্ত্রীর সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করেন। এটি দেখে আমার ছেলে ক্ষেপে যায়। আর আমি তাকে চড় মারিনি, ধাক্কা দিয়েছি। পরে এ নিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেছি।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত