Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞা মানায় ব্যতিক্রম সোনাগাজীর জেলেরা

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
নিষেধাজ্ঞা মানায় ব্যতিক্রম সোনাগাজীর জেলেরা

মা ইলিশ রক্ষায় সমুদ্র ও বিভিন্ন নদ-নদীর অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সরকার ঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে কার্ডধারী প্রত্যেক জেলে ২৫ কেজি চাল পান। প্রয়োজনের তুলনায় এটি অপ্রতুল দাবি করে অনেকে অবৈধভাবে ইলিশ ধরতে নেমে পড়েন নদী ও সাগরে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার জেলেদের ক্ষেত্রে।

নদী-সাগরে মাছ ধরতে না পাড়ায় এই সময়ে বিভিন্ন কাজে যুক্ত থেকে আয় করে সংসার চালাচ্ছেন সোনাগাজীর অনেক জেলে। ধান কাটা, মাটি কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করে সেই আয় দিয়ে সংসারের খরচ জোগান দিচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে আবার মাছ ধরতে নামার জন্য নৌকা ও জাল মেরামত করতে দেখা গেছে।

জেলে ও মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী সদর, চরচান্দিয়া, চরদরবেশ, আমিরাবাদ, নবাবপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। তাঁদের মধ্যে কার্ডধারী মাত্র আড়াই শ। কার্ডধারী জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা পেলেও বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ এবং পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অন্য কাজে যুক্ত হচ্ছেন। যাঁদের কার্ড নেই, তাঁরা বেশি বিপাকে থাকেন।

উপজেলার মুহুরী, ছোট ফেনী, বড় ফেনী, ডাকাতিয়া ও কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে অনেক জেলেকে মাছের ঘেরে জাল টানা, মাটি কাটা ও ধান মাড়াইয়ের কাজ করতেও দেখা গেছে। কেউ কেউ নৌকা ও জাল মেরামত করছেন।

গতকাল সকালে উপজেলার চরচান্দিয়া ও সদর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী জেলেপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কোরবান আলী সোহেল তাঁর মাছ ধরার নৌকা মেরামত করছেন। তবে জেলেপাড়ার প্রবেশমুখে দেখা যায়, ছয়জন লোক জাল মেরামত করছেন। 

জালের বিভিন্ন স্থানে থাকা ছেঁড়া অংশ দেখিয়ে দিচ্ছেন কামরুল ইসলাম নামের মহাজন। ওই ছয়জন টাকার বিনিময়ে মহাজনের জাল মেরামত করে দিচ্ছেন।

এদিকে জেলেপাড়ার দোকানগুলোতে, বিশেষ করে টেলিভিশন থাকা দোকানে ভিড় লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি খালি জায়গায় লুডু খেলতেও দেখা যায়। আবার মোবাইল ফোনের গেমে বুঁদ হয়ে থাকতে দেখা যায় কয়েকজন তরুণ জেলেকে।

মহাজন আবছার বলেন, ‘সরকারি নিয়ম মেনে আমরা নিষেধাজ্ঞার সময় পার করছি। তবে এখন কষ্টের সময়।’

কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ৮-১০টা নৌকা আছে। সবগুলো মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সবগুলোই মেরামত করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, সরকারিভাবে মাত্র ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়, যা দিয়ে পরিবার চালানো সম্ভব নয়। তাই জেলেরা অন্যান্য কাজ করে আয়রোজগার করছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার শিউলী বলেন, ‘উপজেলার অধিকাংশ জেলে সরকারি নিয়ম মেনে চলে। তবে কিছু অসাধু লোক নিয়ম অমান্য করে মাছ ধরতে যায়।’

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা মানলে জেলেদের লাভ। তারপরও যেহেতু সংখ্যায় অনেক কম জেলে চাল সহায়তা পাচ্ছেন; যাঁরা পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের তালিকা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁদের সহায়তা দেওয়া হবে।’

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে যাঁরা নিয়ম মেনে চলেন, তাঁদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। যাঁরা নিয়ম মানেন না, তাঁরা কিন্তু লাভবান হন না। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত